প্রকাশিত: ২৭/১২/২০১৭ ১২:৩৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৮:৫৬ এএম

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার::
কক্সবাজারে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদোন্নতিজনিত বদলি। গত ২১ ডিসেম্বর দেশের ১৬ জন জেলা প্রশাসক পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা পেয়েছেন।

এর মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনও। প্রচার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের পদোন্নতির সংবাদ প্রচার হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সচেতন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, এই পদোন্নতি ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের জন্য সুসংবাদ বটে। কিন্তু কক্সবাজার জেলাবাসীর জন্য এ পদোন্নতি রীতিমতো দুঃসংবাদ। কারণ যেকোনো মুহূর্তে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে জেলা প্রশাসককে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা। অর্থনীতির ছাত্র তিনি। যুক্তরাজ্যে উচ্চতর লেখাপড়াও করেছেন। এর আগে ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

জানা গেছে, এক সংকটময় সময়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন মো. আলী হোসেন। তিনি কক্সবাজারের ২১তম জেলা প্রশাসক। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এক হাজার ৪১৪ একর জমির অধিগ্রহণ নিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল। ২৩ কোটি টাকার সেই কেলেঙ্কারিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমসহ আরো বেশ কজন সরকারি কর্মচারী। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দ্রুত তদন্তে নামে। বর্তমানে এসব সরকারি কর্মকর্তা দুদুকের মামলার আসামি।

জাপানি উন্নয়ন সংস্থা-জাইকার ৪০ হাজার কোটি টাকার অর্থ সহযোগিতায় দেশের সবচেয়ে বড় একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে এ রকম বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও নাড়া দেয়। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলও চিন্তিত হয়ে পড়ে পদ্মাসেতুর মতো ব্যাপক সমালোচনার ভয়ে।

এ সময় কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম স্থাপন, রেললাইন, রামু সেনানিবাস, মহেশখালী দ্বীপে একে একে ৫টি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জমি অধিগ্রহণ, খুরুশকুলের বিশেষ আশ্রায়ন প্রকল্প, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজসহ প্রায় দুই ডজন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল। প্রকল্পগুলোর সবই প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকাভুক্ত।

কক্সবাজারে জনশ্রুতি রয়েছে, মাতারবাড়ীর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর সরকারের শীর্ষ মহলে একজন ‘সৎ’ সরকারি কর্মকর্তার বড় প্রয়োজন দেখা দেয়। এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হয়ে পড়ে কক্সবাজারের বাস্তবায়নাধীন প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সৎ এবং একজন দক্ষতা সম্পন্ন জেলা প্রশাসকের।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, খোদ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বেশ কয়েকজন সচিবকে ডেকে নিয়ে কক্সবাজার জেলার জন্য একজন জেলা প্রশাসক বাছাই করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আলী হোসেনকে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতোমধ্যে ২ বছর ১০ মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলার একে একে সব মেগাপ্রকল্পের উন্নয়নকাজ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি পরিচালনা করেন। সাগর পাড়ের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পসহ বেশ কিছু মেগাপ্রকল্পের কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকার চেক জেলা প্রশাসক নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে বিতরণ করার নজির স্থাপন করেন। সেই সাথে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা দুর্নীতি ও দালালমুক্ত করেন। এক সময় জমির একটি খতিয়ান সৃজনে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হত। সেই দুর্নীতির ঘটনাও বর্তমান জেলা প্রশাসক আসার পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক জানান, দেশের প্রধান পর্যটননগরী কক্সবাজারে প্রচুর মূল্যবান সহায় সম্পদ ইতোমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে। বর্তমান জেলা প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব সরকারি সম্পদও উদ্ধার করেছেন।

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার পর্যটনশহর হওয়ার কারণে এখানকার মূল্যবান সম্পদ লুটেপুটে নিতে তৎপর রাঘব বোয়ালরা। বর্তমান জেলা প্রশাসক অত্যন্ত কঠোরহস্তে কক্সবাজারের সম্পদ রক্ষা করেছেন। ’

জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তের কারণে প্রভাবশালীরা সরকারি সম্পদ হাতিয়ে নিতে না পেরে তাঁকে অনেক আগেই সরিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছিল বলে জানান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক। তিনি জানান, বর্তমান জেলা প্রশাসকের সময়ে দেশে সবচেয়ে বড় দুর্যোগ হিসেবে নেমে এসেছে রোহিঙ্গা সমস্যা। এই সমস্যার সময়ে তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন কক্সবাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। এতগুলো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে তাঁকে জেলার সরকারি সম্পদ রক্ষার দায়িত্বটি পালন করতে হয়েছে-একজন চৌকিদারের মতোই। ’

তিনি আরো বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের পদোন্নতিতে সত্যিই জেলাবাসীকে চিন্তিত করে তুলেছে। কেননা তিনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব যেমনি সততার সাথে পালন করেছেন তেমনি লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে সরকারি সম্পদও রক্ষা করেছেন। এমন একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা জেলাবাসী কি পাবেন-এমনই প্রশ্ন এখন জেলার সর্বত্র।

পদোন্নতিপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি আর বদলি স্বাভাবিক ব্যাপার। এতে প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির কোনো ব্যাপার নেই। তবে কিছু অসমাপ্ত কাজের জন্য আফসোস থাকবে। ’ তিনি মনে করেন, কক্সবাজার জেলা শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে। এজন্য একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখানে সর্বাগ্রে প্রয়োজন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্সবাজার ক্যাম্পাস স্থাপনে তিনি ৫ একর জমি বরাদ্দ দিতেও ভূমিকা পালন করেছেন। একটি সরকারি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সরকারের নিকট প্রস্তাবনা পেশ করেছেন। কলাতলী দরিয়ানগরে একটি ‘বার্ড পার্ক’ স্থাপনের মাধ্যমে সাগর পাড়ের মূল্যবান জমি রক্ষা করা প্রয়োজন। সেই সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র কক্সবাজার ডায়াবেটিক হাসপাতালসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য একখণ্ড জমির ব্যবস্থা করার ব্যাপারে তাঁর ইচ্ছার কথা তিনি জানান। সুত্র: কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে দুর্ঘটনার পর ট্রেন আটকে বিক্ষোভ, তদন্ত কমিটি গঠন

কক্সবাজারের রামুতে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার পাঁচজন যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজারমুখী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে ...

ইউএনওর ‘স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ’, পদ হারালেন জামায়াত নেতা

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা মডেল কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং উপজেলা জামায়াতের ...

জামিন নামঞ্জুর,ঘুমধুমের ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

চট্টগ্রামের একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ...